Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অধিক ফল উৎপাদনে লাগসই তথ্যপ্রযুক্তি

ফলের দেশ বাংলাদেশ। আমাদের আছে ১৩০টির বেশি ফল। এসব ফল পুষ্টিতে মিষ্টিতে তুষ্টিতে স্বাদে গন্ধে তুলনাহীন। কিন্তু হলে কি হবে আমরা এখনও পরিকল্পিতভাবে ফলের বাগান প্রতিষ্ঠা বা বাগান ব্যবস্থাপনা করি না। এ কারণে কাক্সিক্ষত ফলনও পাই না। এসব ফলের উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে হাজারো সমস্যা। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফলের কিছু জরুরি ফল তথ্য, প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা জানার জন্য দেয়া হলো।
ফ্রুট ব্যাগিং বা ফল ঢেকে দেয়া : আম ও পেয়ারা ছোট অবস্থাতেই ব্যাগিং করলে রোগ, পোকামাকড়, পাখি, বাদুড়, কাঠবিড়ালি এসব থেকে সহজেই রক্ষা করা যায়। ব্যাগিং করা ফল অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং আকর্ষণীয় রঙের হয়। ব্যাগিং সাদা কাগজ, বাদামি কাগজ বা ছোট ছিদ্রযুক্ত পলিথিন দিয়ে করা যেতে পারে। ব্যাগিং করলে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে প্রতিহত হয় বলে কোষ বিভাজন বেশি হয় এবং ফল আকারে  বড় হয়। ব্যাগিং করার আগে অবশ্যই প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ০.৫ মিলিলিটার হারে টিল্ট ২৫০ ইসি মিশিয়ে পুরো ফল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফ্রুটব্যাগিং আরো অন্যান্য ফলের ক্ষেত্রেও দারুণ ভালো ফল দিচ্ছে।
শাখা-প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি : পেঁয়ারার ডাল বাঁকালেই প্রায় দশগুণ বেশি ফলন হয়। তাছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বারো মাসই ফল ধরানো সম্ভব হয়। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরও প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গুণ বেশি ফল ধরবে। বছরে দুইবার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে এবং হেমন্তকালে শাখা প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাসের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারার ফুল ও ফলধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলেই এ পদ্ধতি শুরু করা যাবে এবং ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব। ডাল বাঁকানোর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দিতে হয়। ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের প্রায় এক থেকে দেড় ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুলফল রেখে বাকি অংশ ছেঁটে দিতে হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি করে সঙ্গে অথবা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দিতে হয়। গ্রীষ্মকালে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন পরেই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। নতুন ডাল ১ সেন্টিমিটার লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেয়া হয়। আর হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোণেই ফুল আসে। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়।
শিকড় উন্মুক্তকরণ পদ্ধতি : পেয়ারা গাছের গোড়ার মাটি তুলে বা আলগা করে দিতে হবে। মাটি তুলে দিয়ে গাছের শিকড়গুলো বের করে নাড়াচাড়া দিতে হবে। গাছের গোড়া থেকে ০১ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত মাটি কোদাল, শাবল বা নিড়ানি দ্বারা খুব ভালোভাবে সাবধানতার সঙ্গে মাটি তুলে দিতে হবে। মাটি তুলে দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন গাছের শিকড়গুলো কেটে না যায়। বিশেষ করে গাছের আসল মূল কাটা ও উৎপাটন করা যাবে না। গাছ নাড়ানো যাবে না। সাধারণত যে কোনো বয়সের পেয়ারা গাছে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। গোড়ার মাটি খুলে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পরিচর্যা করতে হবে। পরিচর্যাকালে পরিমাণমতো সার প্রয়োগ ও সেচ প্রদান ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ পদ্ধতিতে গাছের পাতা লাল হয়ে ঝরে যেতে পারে। আমাদের দেশে এপ্রিল-মে মাসে পেয়ারা গাছে শিকড় উন্মুক্ত করতে হয়। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পেয়ারা গাছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফল ধারণ করে।
গরম পানিতে আম শোধন ও পাকানো : গরম পানিতে পরিপক্ব কাঁচা আম শোধন করা হলে আমের গায়ের রঙ সুন্দর ও মসৃণ হবে। আমের গায়ে লেগে থাকা রোগজীবাণু ও পোকামুক্ত হবে। ভোক্তাদের নিকট অশোধিত আমের তুলনায় এ শোধিত আমের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে, বাজারমূল্য বেশি হবে। মৌসুমে পরিপক্ব পুষ্ট কাঁচা আম গাছ থেকে সাবধানে পেড়ে তা আগে পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর কোনো পাত্রে ৫২-৫৫ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি (পানিতে হাত ডুবালে সহনীয়মাত্রায়) গরম হলে তাতে পানিতে পরিষ্কার করা আমগুলো ঠিক ৫ মিনিট রেখে এক সঙ্গে উঠিয়ে নিতে হবে। আমের গা থেকে পানি ঝরা শেষে শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক নিয়মে আমগুলো প্যাকিং করে বাজারজাত করতে হবে। এ ব্যবস্থায় আমের জাতের প্রকারভেদে সাধারণ আমের চেয়ে গরম পানিতে শোধন করা আমের আয়ু ১০ থেকে ১৫ দিন বেড়ে যাবে। এ ব্যবস্থায় আর রাসায়নিক ব্যবহার প্রয়োজন হবে না, জনসাধারণ বিশুদ্ধ আমের স্বাদ পাবে। দূর-দূরান্তে দেশ-বিদেশে এভাবে গরম পানিতে শোধিত আম বাজারজাত করা যাবে, স্বাদ আর মান সঠিক রেখে আম থেকে বেশি মুনাফা হবে।
আনারসে হরমোন ব্যবহার : সম্ভাবনাময় ফল আনারসের কথা চিন্তা করে আমাদের উদ্যান বিজ্ঞানীরা হরমোন প্রয়োগে সারা বছর আনারস উৎপাদনের কৌশল সাফল্যজনকভাবে আবিষ্কার করছেন। এ পদ্ধতি অনুসরণে এ দেশের মানুষ সারা বছরই আনারসের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। অর্থাৎ বলা যায় আনারসও বারোমাসি ফলের গর্বিত স্থান দখল করতে পারবে। আনারস উৎপাদনে প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে গাছে ফুল আসতে ১৫ থেকে ১৬ মাস এবং আনারস পাকতে ২১ থেকে ২২ মাস সময় লেগে যায়। এতে ফলের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা জমিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। বিশ্বে আনারস উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ যেমন- মালয়েশিয়া, হাওয়াই, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, ভারত, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ বহুকাল আগে থেকেই হরমোন প্রয়োগ করে আনারসের উৎপাদন করা হচ্ছে। হরমোন প্রয়োগে আনারস উৎপাদনের সুবিধার কথা জেনে আনারস চাষি উৎসাহিত হবেন এবং জাতীয় সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবেন। হরমোন প্রয়োগের কারণে কম সময়ে আনারস পাওয়া; এক সঙ্গে বা কাক্সিক্ষত সময়ে আনারস পাওয়া যায়; ইচ্ছে অনুযায়ী বছরের যে কোনো সময়ে অনায়াসে আনারস পাকানো যায়; অমৌসুমে আনারস বিক্রি করে দ্বিগুণ, তিনগুণ বহুগুণ দাম পাওয়া যায়; কম খরচে বেশি লাভ করা যায়Ñ হরমোন প্রয়োগে আনারস প্রতি খরচ মাত্র ২০ পয়সা থেকে ২৫ পয়সা আর আনারস প্রতি বাড়তি লাভ ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা; সারা বছর ফলানো যাবে বলে উৎপাদনের এবং সরবরাহের বছরব্যাপী নিশ্চয়তা পাওয়া যায় আর সে কারণে দেশে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে; পচনশীলতার কারণে পচে যায় না, বর্ষা মৌসুমে পরিবহন, স্তূপিকীকরণ সমস্যাজনিত অপচয় মোটেই হবে না; বাগানে অতিরিক্ত উৎপাদন সম্ভব হবে। কেননা, হরমোন প্রয়োগে ৮০ থেকে ৯০% গাছে ফল ধারণ করে হরমোন ব্যতিরেকে গড়ে ৫০ থেকে ৬০% গাছে ফল ধরে।
হরমোন গাছ থেকে উৎপাদিত একপ্রকার রাসায়নিক দ্রব্য। আনারসের ক্ষেত্রে সাধারণত ১. ইথ্রেল ২. ন্যাপথলিন এসিটিক এসিড, ফুল আনতে সাহায্য করে। ইথ্রেল ৫০০ পিপিএম দ্রবণ তৈরির জন্য প্রতি লিটার পরিষ্কার পানিতে ১.৩ মিলিলিটার তরল ইথ্রেল (৩৯% ইথাফন) মিশিয়ে নিতে হবে। হরমোন দ্রবণ প্রতিদিন ভোরবেলায় (সকাল ৬-৮টা) ৯ থেকে ১৩ মাস বয়সের (৩০ থেকে ৪০ পাতাবিশিষ্ট) প্রতি গাছে ৫০ মিলিলিটার হরমোন দ্রবণ গাছের ডগায় ঢেলে দিতে হবে। হিসাব করে দেখা গেছে ১ লিটার হরমোন দ্রবণ দিয়ে ২০টি গাছে প্রয়োগ করা যায়। বৃষ্টি বাদলার দিনে হরমোন প্রয়োগ করলে কার্যকারিতা থাকে না বা কম হয়। প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন বৃষ্টি না হয় এ চিন্তা মাথায় রেখে দ্রবণ প্রয়োগ করতে হবে। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিডিউল করে হরমোন প্রয়োগ করলে কাক্সিক্ষত সময়ে অর্থাৎ অমৌসুমে আনারস পাওয়া যায়। হরমোন মানুষের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। কিন্তু ব্যবহারকালীন সাবধানতা অবলম্বন বেশি জরুরি। ব্যবহারকালে শরীরে, কাপড়ে যেন না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। লাগলে নষ্ট হয়ে যাবে। প্রতিকার হিসেবে তাৎক্ষণিক বেশি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দ্রবণ তৈরি এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে পানিজনিত বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। একটু সাবধান হলে কোনো সমস্যা থাকে না। আনারস উপাদেয় ফল। আমাদের দেশে বলতে গেলে খরচবিহীন বা কম খরচে আনারস উৎপাদন করা হয়। আমাদের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আনারসের এ হরমোন ব্যবস্থাপনা আনারসকে বর্তমানের চেয়েও অধিকতর দামি আলোকিত ভুবনে নিয়ে আসতে পারে।
ছাদ বা বারান্দা এবং ড্রাম বা টবে ফলের চাষ : জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে বাড়িঘরের ঘনত্বও বেড়ে গেছে। তাই অনেকেরই বাড়িতে ফুল ফলের বাগান করার মতো বাড়তি জায়গা পাওয়া যায় না। তাই বলে তো বাগান করার সখ থাকবে না এমন হতে পারে না। ইদানীং শহরে এমন অনেক শৌখিন মানুষই বাড়ির ছাদ ও বারান্দায় ফুল ও ফলের চাষ করছেন। কাটা ড্রাম বা সিমেন্টের বড় টবে ফলের চাষ বেশি করা হয়। বড় বড় মাটির টবেও কিছু  কিছু ফলগাছ লাগাতে দেখা যায়। তবে ছাদ ও বারান্দার কিছু অংশে পাকা বেডে মাটি ও সার মিশিয়ে তাতেও ফলের চারা লাগাতে দেখা যায়। ড্রাম, টব বা স্থায়ী কাঠামোতে লাগানো ফলগাছে জমির মতোই পরিচর্যা প্রয়োজন। অনেক সময় এসব কাঠামোতে পুষ্টি উপাদানের দ্রুত ঘাটতি লক্ষ করা যায়। তাই নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিয়মিত জৈবসার ও পরিমিত সেচ নিশ্চিত করা হলে এসব কাঠামোতে আশানুরূপ ফল পাওয়া যেতে পারে। এসব কাঠামোতে রোপণের জন্য ফলগাছের জাত নির্বাচন সতর্কভাবে করা দরকার। যেসব কলমের চারায় ডালপালা  কম ও দ্রুত ফল দেয় সেসব ফলের চারা ড্রাম বা টবে লাগানো যেতে পারে। আজকাল সরকারি বেসরকারি নার্সারিতে কাজী পেয়ারা, আম্রপালি আম, জামরুল, পেঁপে, লেবু, লিচু হাইব্রিড কামরাঙা, আপেল  কুল, বারোমাসি আমড়া, আঙুর প্রভৃতি ফলের কলম পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো কিনে ড্রাম বা টবে রোপণ করে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে নির্মল আনন্দের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তবে ছাদে বাগান করতে হলে ইমারতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া ভালো। তাছাড়া নিয়মিত সার ব্যবস্থাপনা, সেচ ও নিকাশ এবং বালাই ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
টিপ প্রুনিংয়ের মাধ্যমে আমের ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি : বাংলাদেশে আম চাষাবাদের এলাকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল হলেও এ দেশের বেশির ভাগ মানুষ আম পছন্দ করেন। মানুষ বাড়ির আশপাশে, ছাদে যে আমের জাতটি সবচেয়ে বেশি চাষ করে থাকেন সেটি হলো বারিআম-৩ বা আম্রপালি। শখের কাছে নতি স্বীকার করে কেউ কেউ জাতটি চাষ করেছেন টবে এবং ড্রামে। এ ছাড়াও পার্বত্য জেলা যেমন রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এলাকায় বাগান আকারে ব্যাপক আকারে চাষাবাদ হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে বারিআম-৩ বা আম্রপালি জাতটি আকারে বেশ ছোট হতে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গাছে প্রচুর আম ধরলে আকারে ছোট হয়, গাছকে পর্যাপ্ত খাবার না দিলে আকার ছোট হয় এবং গাছের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমের আকারও ছোট হতে থাকে। ফলে জাতটির বাজারমূল্যে দিন দিন কমে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আম সংগ্রহ করার পর অর্থাৎ জুলাই মাসে আম গাছের প্রত্যেকটি ডগার শীর্ষ প্রান্ত থেকে ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট পর্যন্ত কেটে দিলে পরবর্তী বছরে সে গাছ হতে বেশি ফলন ও গুণগত মানসম্পন্ন আম পাওয়া যাবে। তবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রুনিং করা উত্তম।
প্রুনিংয়ে কর্তিত অংশ থেকে ৩-৪টি নতুন ডগা বের হয় এবং নতুন শাখার বয়স ৫ থেকে ৬ মাস হওয়ায় প্রায় প্রত্যেকটি শাখায় মুকুল আসে। বর্তমানে এ জাতটির ওজন ৬০ থেকে ১৮০ গ্রাম পর্যন্ত হতে দেখা যাচ্ছে কিন্তু এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া প্রুনিংয়ের মাধ্যমে আমের আকার ও গুণগতমান বাড়ানো সম্ভব; পাতার লাল মরিচা রোগ এ জাতের একটি বড় সমস্যা। কোনো প্রকার ছত্রাকনাশক ¯েপ্র ছাড়াই প্রায় ২ বছর পর্যন্ত রোগটি সহজেই দমন করা যায়; আমবাগানে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা যাবে; কোনো কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই ভালো আম পাওয়া যাবে; বর্তমানে ঘন করে গাছ রোপণ করে যারা কাক্সিক্ষত ফলন পাচ্ছেন না সেক্ষেত্রে এ প্রযুক্তিটি সহায়ক হবে; আমগাছের আকার ছোট রাখা যায় অর্থাৎ সুন্দর ক্যানোপি তৈরি করা যায়; প্রচুর জ্বালানি পাওয়া যাবে; আমগাছের বয়স ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হলে ভালো; প্রুনিং প্রতি ৫ বছরে একবার করতে হবে। প্রুনিং করার পর গাছের বয়স অনুযায়ী সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজন হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আগস্ট মাসে প্রুনিং না করা উত্তম। কারণ এ ক্ষেত্রে গাছে মুকুল নাও আসতে পারে। নতুন ডগা বা কুশি বের হলে ছত্রাকনাশক ¯েপ্র করতে হবে। আমের পাতা কাঁটা দেখা দিলে কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ¯েপ্র করতে হবে। অন্যান্য জাতগুলোর বেলায় এ প্রযুক্তিটির ব্যবহার না করা ভালো। সঠিক সময়ে, পরিমাণমতো অংশ কাটা ও সঠিক সার ব্যবস্থাপনা করা হলে এ প্রযুক্তিটি নিঃসন্দেহে বারিআম-৩ বা আম্রপালি আমচাষিদের জন্য ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে।
আম সংগ্রহের পরিপক্ব সময়কাল : আমের মৌসুমে আমের ভালো স্বাদ পাওয়ার জন্য আমচাষিরা আম সংগ্রহের জন্য নিদিষ্ট সময় অনুসরণ করতে পারবেন। স্থানীয়ভাবে কোনো জাতের আম আগে পাকলে কৃষি অফিস বা কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে আম সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে পারবেন। তাপমাত্রা বেশি হলে বা কমে গেলে আম সংগ্রহের সময়ে কিছুটা তারতম্য হতে পারে। গোবিন্দভোগ- সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংগ্রহ করা যাবে। বারিআম-১ (মহানন্দা), গোপালভোগ পাহাড়ি জেলাগুলোতে এবং সাতক্ষীরায় মে মাসের দ্বিতীয় এবং রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সংগ্রহ করা যাবে। ক্ষীরসাপাতি/হিমসাগর; সাতক্ষীরা, মেহেরপুরে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে, রাজশাহীতে মে মাসের শেষ সপ্তাহে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বারি আম-২ (লক্ষণভোগ), ল্যাংড়া পাহাড়ি জেলাগুলোতে এবং সাতক্ষীরায় মে মাসের শেষ সপ্তাহে এবং রাজশাহীতে জুনের প্রথম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংগ্রহ করা যাবে। বোম্বাই রাজশাহীতে জুন মাসের দ্বিতীয় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। ফজলি রাজশাহীতে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। বারিআম-৩ (আম্রপালি) পাহাড়ি জেলাগুলোতে এবং সাতক্ষীরাই সংগ্রহ শুরু হবে জুনের তৃতীয়, রাজশাহীতে জুনের শেষ সপ্তাহে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। মল্লিকা রাজশাহীতে জুলাই মাসের প্রথম এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। বারি আম-৪ রাজশাহীতে জুনের শেষ সপ্তাহ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংগ্রহ শুরু হবে। হাঁড়িভাঙ্গা রংপুরে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ হতে সংগ্রহ শুরু হবে। আশ্বিনা রাজশাহীতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। গুটি প্রাকৃতিকভাবে পাকা শুরু হলে তারপর সংগ্রহ করা যাবে।
বিশ্লেষণ হলো কিছু তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে, থেকে গেল অনেক কিছু। আগামীতে আবার বিস্তারিত নিয়ে আসব বাকি সব কথা নিয়ে।


কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*

*উপপরিচালক (গণযোগাযোগ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon